Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

“বছরে ইঁদুর খাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টন, খাদ্য ঘাটতি রুখতে দরকার ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ” এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান 2022 এর শুভ উদ্বোধন  অনুষ্ঠিত হয়।


শিরোনাম
বিপিএইচ বা কারেন্ট পোকা দমনে করনীয়
বিস্তারিত

বিপিএইচ বা কারেন্ট পোকার পরিচিত, ক্ষতির ধরণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা

বাদামী গাছফড়িং এর পরিচয়

ইংরেজি নামঃ Brown Planthopper Delphacidae গোত্রের নামঃ Nilaparvata lugens (Stal) প্রজাতির সাধারণ নাম। সবুজ ধানের অন্যতম শত্রু বাদামী গাছফড়িং।[১] এটি কারেন্ট পোকা নামেও পরিচিত।[২] এরা খুব তাড়াতাড়ি বংশ বৃদ্ধি করে, ফলে এ পোকার সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, আক্রান্ত ক্ষেতে বাজ পড়ার মত হপারবার্ণ – এর সৃষ্টি হয়।

আকার আকৃতি: এগুলোর গায়ের রঙ বাদামি বা গাঢ় বাদামী। পূর্নবয়স্ক পোকা লম্বা ও খাটো দু’ধরনের হয়ে থাকে। এগুলোর দেহ খুবই নরম এবং স্ত্রী পোকার পেট পুরুষ অপেক্ষা বেশ বড়ো। পূর্নবয়স্ক পোকা ৩.৫-৫.০ মি.মি. লম্বা। স্ত্রী পোকা পুরুষ অপেক্ষা বড়।

জীবন চক্র:

বাদামি গাছ ফড়িং এর জীবনচক্রে তিনটি স্তর আছে। এ স্তর গুলো হচ্ছে ডিম, বাচ্চা এবং পূর্ণাঙ্গ। পূর্ণবয়ষ্ক স্ত্রী ফড়িং খোল পাতার ভিতরে গুচ্ছ আকারে ৮-১৬ টি ডিম পাড়ে। ৪-৯ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। প্রথম পর্যায়ে বাচ্চা ৫ বার তাদের খোলস বদলায়। বাচ্চাগুলোর রং সাদা থাকে এবং পরে বাদামি রং ধারন করে। বাচ্চা থেকে খাটো ও লম্বা পাখা-বিশিষ্ট উভয় ধরনের পূর্ণ বয়স্ক ফড়িং হতে পারে। সাধারণত ধান পেকে গেলে লম্বা পাখা বিশিষ্ট পূর্ণ বয়স্ক ফড়িং দেখা যায়। পূন বয়স্ক পোকার গায়ের রং বাদামী। আকারে প্রায় ৪ মিলিমিটার লম্বা। বাচ্চা থেকে পূর্ণ বয়স্ক ফড়িং -এ পরিণত হতে আবহাওয়া ভেদে ১৪-২৬ দিন সময় লাগে। পূর্ণ বয়স্ক বাদামি গাছ ফড়িং প্রায় ৩ সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। বাদামি গাছ ফড়িং এর একটি জীবন চক্র শেষ হতে আবহাওয়া ভেদে ২১-৩৩ দিন সময় লাগে এবং অনুকুল আবহাওয়ায় বছরে ১০-১১ বার বংশ বিস্তার করতে পারে। পূর্ণ বয়স্ক বাদামি গাছ ফড়িং লম্বা ও খাটো পাখা বিশিষ্ট হতে পারে। লম্বা পাখা বিশিষ্ট পূর্ণ বয়স্ক বাদামি গাছ ফড়িং বহুদূরেে উড়ে যেতে পারে এবং এরাই মৌসুমের প্রথম দিকে ধান ফসলে আক্রমন করে। এরা তুলনামূলকভাবে খাটো পাখা বিশিষ্ট বাদামি গাছ ফড়িং এর চেয়ে কম ডিম পাড়ে এবং এদের ডিম পাড়ার অঙ্গ ছোট। এদের দু’জোড়া প্রায় সমান পাখা রয়েছে এবং পাখা এদের পেটের চেয়ে লম্বা। অন্যদিকে ছোট পাখা বিশিষ্ট ফড়িংগুলো উড়তে পারে না। এরা শুধু ক্ষেতের মধ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে পারে। এরা তুলনামূলকভাবে লম্বা পাখা বিশিষ্ট বাদামি গাছ ফড়িং এর চেয়ে বেশি ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়ার অঙ্গ বড়। এদের দু’জোড়া পাখা আছে কিন্তু নিচের জোড়া লুপ্ত প্রায়। এরা পাতার খোলে এবং মধ্যশিরায় ডিম পাড়ে। ডিমের রং হালকা হলুদ , কলার কাঁদির মতো দেখতে। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলোর গঠন ,পূন বয়স্ক পোকার মতই, তবে আকারে খুবই ছোট।এদের মধ্যে পাখাযুক্ত এবং পাখাবিহীন দু‘ধরনের পোকা রয়েছে। এক জোড়া (পুরূষ ও স্ত্রী) পোকা থেকে দু‘এক মাসের মধ্যে হাজার হাজার পোকা জন্ম নিতে পরে।

বংশ বিস্তারের অনুকুল পরিবেশ:

এদের বেঁচে থাকা ও বংশ বিস্তারের জন্য আদ্র্র্র ও ছায়াযুক্ত স্থান খুবই প্রয়োজন।যে সমস্ত জমি সব সময় ভিজা থাকে বা কিছু পানি জমে থাকে সে সকল জমিতে এ পোকার আক্রমন বেশি হয়। ঘন করে চারা রোপন করলে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করলে এ পোকার আক্রমন বেশি হতে পারে।জমি থেকে নিয়মিত আগাছা পরিস্কার না করলে এবং সারি করে চারা রোপন না করলে এ পোকার আক্রমন বেশি হতে পারে।১২-৩১ সেঃ তাপমাত্রায় এ পোকার বংশ বিস্তার বেশি হয়। এরা আলোবাতাস পছন্দ করে না। ভেজা স্যাতস্যাতে জায়গার কাছাকাছি এরা বাস করে। এ পোকার বাচ্চা ও পূণবয়স্ক উভয় অবস্থায়ই ধান গাছের গোড়ায় বসে গাছের রস চুষে খায়। এর ফলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পোকার সংখ্যা অধিক হলে আক্রান্ত ফসলে বাজ পোড়ার মত (হপার বান) অবস্থার সৃস্টি হতে পারে।

আক্রমণের লক্ষন:

বাদামী গাছ ফড়িং বাংদাদেশে ধান ফসলের জন্য বর্তমানে একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর পোকা। বোরো, আউশ এবং রোপা আমনের উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতেই এ পোকার আক্রমন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক উভয় অবস্থায় ধান গাছের গোড়ায় কান্ড এবং পাতার খোল থেকে রস শুষে খায়। এক সাথে অনেকগুলো পোকা রস শুষে খাওয়ার ফলে প্রথমে হলদে ও পরে শুকিয়ে মারা যায় এবং দূর থেকে পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়। এ ধরনের ক্ষতিকে ইংরেজিতে ”হপার-বার্ণ” বা ফড়িং পোড়া বলা হয়।ধানে শীষ আসার সময় বা তার আগে হপার বার্ন হলে কোন ফলনই পাওয়া যায় না। তবে ধানের দানা শক্ত হওয়ার পর হপার-বার্ন হলে ২০-৪০% ক্ষতি হয়।সাধারনত ধানের কুশি গজানো অবস্থা থেকে ধান পাকা অবস্থা পর্যন্ত আক্রমন করতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রমন করে কাইচ থোড় অবস্থা থেকে দুধ অবস্থা পর্যন্ত। এবং ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খায়। ফলে গাছ পুড়ে যাওয়ার রং ধারণ করে এ নিয়ে আগেকার সময়ে এলাকা লোকদের মাঝে ঝগড়াঝাটিও কম হতো না । তারা মনে করত পাশের বাড়ীর কবীরের ছেলে রহিমের মেয়ে বিয়ে করতে না পারায় শত্রুতা বশত: রহিমের ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এক বলা হয় হপার বার্ন বা কড়িপোড়া। এ পোকার ব্যবস্হানার জন্য ভাদ্রমাস থেকেই ধান ক্ষেতে গাছের গোড়া পর্যবেক্ষন করতে হবে। এ সময় লম্বা পাখা ওয়ালা ফড়িং আলোক ফাঁদের মাধ্যমে দমন করতে হয়। ধানের চারা বেশী ঘন লাগালে এ পোকার আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। ২৫-১৫ সেন্টিমিটার বা ২০-২০ সেন্টিমিটার দুরত্বে রোপণ ফলে গাছ প্রচুর বাতাস পায় ফলে পোকার বৃদ্ধিতেও ব্যাঘাত ঘটে। লাজ শরম তো-সবারই আছে তাই না? ইউরিয়া সার ক্ষেতে ব্যবহার করলে গাছ পাতা লকলকে তকতকে হয়। এইতো মজা তখন পোকার আক্রমণ ও বেড়ে যায়। তাই বেশী করে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা যাবে না। পরিমিত পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হবে। ধান গাছের গোড়ায় পোকা দেখা দিয়ে ক্ষেতে জামা থাকা পানি সারিয়ে জমি কয়েক দিন শুকিয়ে নিতে হবে। এতে পোকার আক্রমণ কমে যাবে। অবশ্য স্বল্প জীবনকালের ধানের জাত আবাদ করলে এ পোকার আক্রমণ এড়ানো যায়।ধান ক্ষেতের অধিকাংশ গাছে ৪টি পেটমোটা ডিমওয়ালা স্ত্রী পোকা অথবা বাচ্চা পোকা দেখা গেলেই কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। জমির অধিকাংশ গাছে অন্তত একটি মাকড়সা দেখা গেলে কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন নাই। কারণ তারা আমাদের বন্ধু। তারা বাদামী গাছ ফড়িং খেয়ে ফেলে। শত্রুর শত্রুতো বন্ধুই হয়, তাই না?আসলে বাদামী গাছ ফড়িংয়ের আক্রমণ দেখা দিলে সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে এ পোকা দমন করতে হয়। গ্রামের সবাই মিলে এর দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে না হলে এ পোকা পাশ্ববর্তী সবার জমিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়বে। এক সময় হপার বার্নে এলাকায় শত্রুতামির জন্ম দিতো, জ্ঞানের উৎকর্ষতায় এখন তা সামাজিক এটা গড়ে তোলার নিয়ামক হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই বলি দেশের সকল কৃষকের পারস্পারিক সম্পৃক্ততা ও সহমর্মিতা কৃষি ও সমাজ উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে কাজ করে।

ক্ষতির লক্ষণ:

বাদামী গাছফড়িং গ্রাসি স্টান্ট, র‌্যাগেট স্টান্ট ও উইল্টেড স্টান্ট নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়।

ব্যবস্থাপনা:

১. বাদামী গাছ ফড়িং সহনশীল জাতের চাষ করা।

২. ধানের চারা ভেদে দু‘সারির মাঝে ১০-১২ ইঞ্চি ফাঁকা রাখুন এবং ৮-১০ ইঞ্চি দুরে দুরে চারা লাগান।

৩. ১০ সারি পর পর ১ সারি বাদ রেখে ল্যাগ পদ্ধতি অনুসরন করূন। এতে করে ধানে ক্ষেতে প্রচুর আলো বাতাস প্রবেশ করবে। ফলে বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণ কম হবে। তবে ফলনে কোন কম হবে না।

৪. প্রতি সপ্তাহে অন্ততঃ একবার ধানক্ষেত পর্যাবেক্ষ ও জরিপ করে পোকার উপস্থিতি যাচাই করূন।

৫. বাদামী গাছ ফড়িং এর উপস্থিতি নিণয়ের জন্য ধানক্ষেতের পাশে সন্ধ্যার পর ৩ ঘন্টা আলোক ফাঁদ স্থাপন করতে হবে।

৬. সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করূন। ইউরিয়া সার বেশী মাত্রায় ব্যবহার করলে চারা বেশী সবুজ ও রসালো হয়, ফলে পোকার আক্রমন বেড়ে যায়। তাই এলসিসি ব্যবহার করে পরিমিত মাত্রায় ইউরিয়া সার ২ থেকে ৩ বারে ব্যবহার করূন।

৭. আক্রান্ত ক্ষেতের আগাছা , মরা পাতা, খোল ইত্যাদি পরিস্কার করে ক্ষেতে বেশী আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন।

৮. ধানের জমিতে সব সময় পানি আটকে না রেখে মাঝে মাঝে জমি শুকিয়ে ফেলুন। এতে পোকার আক্রমন ও বংশ বৃদ্ধি কমে যাবে।

৯.এ পোকার বিকল্প পোষক আঙ্গুলী ঘাস ধবংস করতে হবে।

১০. ধান ক্ষেতে বাদামী গাছ ফড়িং এর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হলে ধান ক্ষেতে ২ হাত পর পর ফাঁড়ি/ বিলি করে দিয়ে ক্ষেতে আলো বাতাস প্রবেশের সুযোগ করে দিন।

১১. উপরূক্ত পদ্ধতিতে বাদামী গাছ ফড়িং দমন করা সম্ভব না হলে তখনই কেবল শেষ ব্যবস্থা হিসাবে পাইমেট্রোজিন, পাইমেট্রোজিন+নিটেনপাইরাম জাতীয় কীটনাশক ( যেমন- পাইরাজিন, হপারশট, পাইটাফ, প্লেনাম ইত্যাদি) আক্রান্ত গাছের গোড়ায় সঠিক মাত্রায় স্প্রে করূন।

 

 

ডাউনলোড
ছবি
প্রকাশের তারিখ
07/09/2021
আর্কাইভ তারিখ
29/09/2022